এখন আর নেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতা

- আপডেট সময় : ০৮:১১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে
শীত মানেই খেজুর রস। নানা ধরণের মুখরোচক পিঠা ও পায়েস তৈরিতে খেজুর রসের বিকল্প নেই। একসময় খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল দক্ষিণাঞ্চলের সব শ্রেণির মানুষের নবান্নের পছন্দের খাবার।শীতের আগমনের সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আবহমান গ্রামবাংলার খেজুর রস সংগ্রহকারী গাছিরা। গাছিদের এখন আর নেই আগের মত ব্যস্ততা, নেই কোন তাড়া। নেই খেজুরের রস আগে সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতা। সাগর উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস। এক সময় শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষ গাছ ছিলানো (গাছ কাটা) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে প্রকৃতির সেরা উপহারসমূহের মধ্যে অন্যতম খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে এ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তেন।
কালের বিবর্তনে দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর রস সংগ্রহের পেশা। আগের দিনগুলোতে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে প্রতি ঘরে ঘরে দেখা যেত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ প্রতিযোগিতা। কিন্তু বর্তমানে খুব কম দেখা যায় এ পেশার কারিগরদের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক গাছিয়ারা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটা শুরু করেছেন। বিশেষ কৌশলে প্রথমে প্রতিটি খেজুর গাছের ডগার একপাশ থেকে ডেগুয়া গোড়া থেকে কেটে ফেলে শুকানো হচ্ছে। এরপর বাঁশ দিয়ে খিল ও চুঙ্গি তৈরি করে গাছ শুকানোর পর তাতে বসিয়ে হাড়ি অথবা প্লাস্টিকের বোতল ঝুলিয়ে দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। সপ্তাহে পালাক্রমে ৪ দিন রস বের করার পর ৩দিন গাছ শুকানোর পর পুনরায় গাছ কাটা হয়। এভাবে প্রতিটি গাছ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। রস সংগ্রহ করে কোসার ঢেউটিনে বড় আকারের চুলায় জাল দিয়ে তৈরি করা হত খেজুরগুড়, পাটালিগুড়সহ নানা ধরনের গুড়। অপরদিকে ঘরে ঘরে খেজুর রস দিয়ে হরেক রকম মুখরোচক পিঠা পায়েস তৈরির উৎসব দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো তেমনটা চোখে পড়ে না।
লতাচাপলী ইউনিয়নের হোসেনপাড়ার গ্রামের মো. ইউসুফ তালুকদার বলেন, গ্রামে এখন আগের মত খেজুর গাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ছিটেফোঁটা দুই একটা থাকলেও সেই গাছ কাটতে পারছি না। নিজের খেজুর গাছ না থাকায় পরের গাছ কেটে রস বের করতে হচ্ছে। গাছের মালিককে দেয়ার পরে রস বা গুড় বিক্রি করে যে টাকা পাই তাতে পরিশ্রমের মূল্য হয় না। মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ কাটা ছাড়তে পারিনি।
কুয়াকাটা পৌর সভার নবীনপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সেরাজুল হক বলেন, নিজের ও অন্যের সবমিলিয়ে মোট ২৫টি খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য তৈরি করছি। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২ থেকে ৫ কেজি রস পাব বলে আশা করছি। এতে পরিশ্রম হলেও খুব আনন্দ পাচ্ছি। নিজের চাহিদা পূরণ করে বিক্রি করতে পারব। চাহিদা থাকায় বাড়ি থেকেই ক্রেতারা রস নিয়ে যায়।
পৌরগোজা গ্রামের মো. ফোরকান ভুইয়া বলেন, প্রতিবছর শীতের শুরুতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এ বছরও শুরু করেছি। বর্তমানে রসে আকাশচুম্বী চাহিদার কারণে বৃদ্ধ বয়সেও এ পুরাতন পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। তবে অনেকেই এখন আর গাছ কাটে না। তাছাড়া দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, নানা কারণে গ্রামবাংলার এ গাছগুলো কমে যাচ্ছে।ইটের ভাটায় পুরানো হচ্ছে খেজুর গাছ। তারপরও রস উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।