স্বামীর মৃত্যুতে শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা শ্বাশুরীকে নিয়ে অসহায় জীবন গীতা রানীর

- আপডেট সময় : ০৫:০৭:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে
শিশু রিক্তার বয়স মাত্র ৯ মাস, আর ছেলে রুদ্রবালীর বয়স ৮ বছর। এই ছোট্ট বয়সেই পিতাহারা হয়েছে তারা। প্রতিরাতে বাবার অপেক্ষায় বিছানায় শুয়ে পড়ে দু’ভাই-বোন। ঘুম ভাঙার পর বাবাকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অবুঝ হৃদয়। পিতার শূন্যতা বোঝার মতো বয়সও হয়নি এখনো।
এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রতিদিন চোখে পড়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামে। এ গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব বালী (৩২) দুরারোগ্য এক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান। রেখে গেছেন বৃদ্ধা মা বকুল রানী (৭৫), স্ত্রী গীতা রানী ও দুই শিশু সন্তান।
স্বামীর অকাল মৃত্যুতে বিধবা গীতা রানী আজ অসহায় জীবনযাপন করছেন দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে। নেই কোনো উপার্জনের পথ, নেই সাহায্যের হাত। অভাব-অনটন আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।
গীতা রানীর কথায়, স্বামী বেঁচে থাকতে সংসারে যত অভাবই থাকুক, কোনোভাবে সামলে নিত। দিনে দিনে দুই কেজি চাল, বাজার সদাই এনে দিত। এখন তো কেউ নেই। ছেলে-মেয়ে বাবার কথা বললে আর নিজেকে সামলাতে পারি না। তবে এখন আর তাদের সামনে কাঁদি না—গোপনে কাঁদি, গভীর রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে।
তার ছেলে রুদ্রবালী মির্জাগঞ্জের আন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। আর তিন মাস বয়সী ফুটফুটে কন্যাশিশু রিক্তা জন্ম থেকেই নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে।
এ পরিবারে আর কেউ নেই—শ্বাশুরী বৃদ্ধা, বাবার বাড়ির অবস্থা খারাপ, ভাই নেই, আয় রোজগার নেই। নিজের ছোট ছোট সন্তানকে রেখে কোথাও কাজেও যেতে পারেন না গীতা।
বিপ্লবের বড় বোন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ভাই হঠাৎ করে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হলে মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করি। কোনো উন্নতি না হওয়ায় এলাকার মানুষের সহযোগিতায় ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে ঢাকা নেওয়ার পথে ভাই মারা যায়। এখন ভাইয়ের পরিবারে দেখার মতো কেউ নেই। দিন কাটছে অমানবিক কষ্টে।
বর্তমানে ভিজিডি (ভিডব্লিউডি) সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন গীতা রানী। কিন্তু স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৫ হাজার টাকা দাবি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অ্যান্ডুয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অভিমন্যু বালী জানান, বিপ্লবের মৃত্যুতে পরিবারটি একেবারে অসহায় হয়ে গেছে। কোনো উপার্জনক্ষম পুরুষ নেই। স্থানীয়ভাবে যতটা পারছি সহযোগিতা করছি। কিন্তু সরকারি সহায়তা না পেলে পরিবারটির অবস্থা আরও করুণ হবে।
মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আবুল বাসার নাশির জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।