ঢাকা ১০:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মৎস্যজীবী দল নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিবের নিন্দা Logo বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে, উত্তাল সমুদ্রে মাতোয়ারা হাজারো পর্যটক Logo মির্জাগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় বাদী শ্রীঘরে Logo কুয়াকাটায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ, ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের আঘাতে জেলের মৃত্যু Logo মির্জাগঞ্জে ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Logo মহিপুরে পাওনা টাকার জেরে জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ Logo স্বামীর মৃত্যুতে শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা শ্বাশুরীকে নিয়ে অসহায় জীবন গীতা রানীর Logo মির্জাগঞ্জে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি গ্রেফতার Logo কলাপাড়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিক শিক্ষার্থীর বাড়িতে প্রেমিকার অবস্থান, আত্মহত্যার হুমকি Logo কুয়াকাটার প্রাকৃতিক স্বর্গ ‘লেম্বুর বন’

ঘুরে এলাম দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৮:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে

ঘুরতে কার না ভালো লাগে। তাও যদি হয় সাগর পাড়ে। এই তপ্তরোদে সারাদিন মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন একটু বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় নিজেকে বিশ্রাম নিতে মন চায়। তাই ক্লান্ত পথিক খাঁ খাঁ রোদে বিশ্রাম নিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার উপর তপ্তময় রোদ আবার খানিকটা পরে এক পশালা বৃষ্টি। তেমনি ক্লান্তময় দূর করতে এবং সাগর, পাহাড়, ঝর্না দেখতে ও উপভোগ করতে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

ভ্রমনপিপাসুদের পছন্দের জায়গা হলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ঘুরতে যান পর্যটন নগরী কক্সবাজার। একটি আর্থিক সংগঠনের আয়োজনে দুইদিন ব্যাপী প্রশিক্ষন নিতে যাওয়া হয় কক্সবাজার। দুঃখের বিষয় আমাদের দুইদিনের অনুষ্ঠানটি হয়নি। তবে কি ঘুরে-ফিরে দেখা তো আর বাদ দিতে পারি না। যাই হোক মুল কথা হলো- আমার বঢ়র ভাই নিখিল চন্দ্র মিস্ত্রির নেতৃত্বে আমার ক’জন মিলে সম্প্রতি পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কক্সবাজারের উদেশ্যে চট্টগ্রাম এসি গাড়িতে উঠলাম।

জীবনে প্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে যাওয়া, মনে নানা কৌতূহল তো রয়েছে। মনে মনে নানা চিন্তা ভাবনা। আবার বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রে গোছল করতে নেমে প্রান হারিয়েছে এমন সংবাদও শোনা যায় বিভিন্ন সময়ে। যাই হোক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কিছু একটা করা যাবে। প্রথম যাত্রা হিসিবে গাড়িতে করে যাচ্ছি তো যাচ্ছি পথ তো ফুরাতে চাচ্ছে না।

পটুয়াখালী থেকে যাত্রা পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ, ঘন্টা তিনে আটকে রইলাম। আবার যাত্রা শুরু, পথিমধ্যে খাবার বিরতি। আবার ছুটে চলা। পথিমধ্যে আমাদের টিমের একজন সদস্য ঢাকা থেকে গাড়িতে উঠবে। রাত পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে উঠলো আমাদের বয়োজ্যেষ্ট ব্যাক্তি। আবার যাত্রা শুরু, যাত্রা পথে ঘুমিয়ে পড়ি। আবার জেগে উঠি। এভাবে সকাল আটটারদিকে চট্টগ্রাম বাসষ্টান্ডে পৌছলো গাড়ি। সকালে কিছু খেয়ে আবার গাড়ির জন্য অপেক্ষা। সকাল সোয়া নয়টায় গাড়িতে যেতে হবে কক্সবাজার। আবারও যাত্রা শুরু। চট্টগ্রাম বাসষ্টান্ড থেকে কয়েক কিলোমটির দূরে যেতেই দেখা মেলে পাহাড় আর পাহাড়। দেখলে মনে হয় পাহাড়ের বুক চিড়ে আকাঁ-বাঁকা সড়ক বয়ে চলেছে। পাহাড়ের উপরে বসবাস করছে পাহাড়িরা। দেখা যায়, কেউ কাঁদে করে বয়ে পাহাড় উপরে উঠছে। তাদের এক বৈচিত্র্যময় জীবন। সাড়ে পাঁচঘন্টার পরে দুপুর দেড়টারদিকে কক্সবাজার গিয়ে পৌছলাম।

এবারে হোটেল খোঁজার পালা। প্রথমে আমাদের হোটেল খুজঁতে অসুবিধা হলেও আমাদের বিজ্ঞ ব্যাক্তি নিখিল দাদা খুঁজে বের করলো হোটেল ‘ভিজটা বে’। হোটেলের যাবতীয় কাজ সেরে লিফট দিয়ে ভবনের ছয়তলায় আমাদের রুমে গিয়ে পৌছলাম। রুমে পৌছে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারন রাতে না ঘুমানোর ফলে। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আমারদের মিশন সাগর দেখা। রুম থেকে বের হয়ে কক্সবাজার বিচে চলে গেলাম। তখন বিকলে পাঁচটা বাজে।

এবারে নানা কৌতুহলেও অবসান হলো সাগর পাড়ে এসে। ঘুরতে ঘুরতে রাত আটটা বাজে। আজকের দিনে মতো সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ও আগামীকালের কি কাজ আছে তা নিয়ে শলাপরামর্শ। যাই হোক রাতে অনুষ্ঠানের টি-শার্ট ও ব্যাগ দেওয়া হলো কর্তৃপক্ষ তেকে। সকালে ফাইনালি শুনলাম আমাদের অনুষ্ঠানটি হচ্ছে না। কি আর করার এখন সারাদিন ঘুরে দেখা সাগর-পাাহাড়। বিকলেই একটি চান্দের গাড়িতে করে চলে যাই হিমছড়িসহ ৪-৫টি পয়েন্টে। যেতে যেতে দেখা মেলে ছোট-বড় অনেক পাহাড়ের। আবার একটা পাহাড় থেকে আরেকটা পাহাড়ের দূরাত্বও অনেক। নিচ থেকে দেখলে মনে হয় লাফিয়ে যাওয়া এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। তবে পাহারের চূড়ার উপরে উঠলে দেখা যায় অনেক দূরাত্ব। টিকিট কেটে হিমছড়ি পাহাড়ে উঠা। তবে আমার এই প্রথমবার পাহাড়ে উঠা। নেই কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা। সিঁড়ি বেড়ে উপরে উঠছি। কিছু দূর উঠতেই কেমন যানো হাটুর জোর কমে আসছে। তারপরও হাল ছাড়িনি। কয়েকটি সিঁিড়র পার হয়ে উপরে উঠতে দেখা মেলে এক অপরূপ সৌন্দার্যের।

তিনদিকে পাহাড় আর পাহাড়, অন্যদিকে সাগরের বিশাল জলরাশি। হিমঝড়ির পাহাড় থেকে একটা মানুষকে ছোট্ট একটা পিপঁড়ের মতো মনে হয়। পাহাড়ে চূড়ায় উঠে ছবি তোলা। এখানে বহু মানুষ ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে,স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার জন্য। পাহাড়ে উঠতে কষ্ট হলে ওখানকার কর্তৃপক্ষ তাকে দুটি লাঠি দিয়ে দেয়,যাতে সে লাঠি ভর করে পাহাড়ে উঠতে পারে। তবে পাহাড়ে উঠা একটু কষ্ট হলেও নামতে মোটেও কষ্ট হয়নি। পাহাড় থেকে নেমেই হাতের বা দিকে রাস্তা দিয়ে যেতেই রয়েছে হিমঝড়ি ঝর্না। কোথা থেকে এক পানি পরছে তা কেউ বলতে পারছে না। এমটাই বলেছেন অনেকেই। ইনানী সৈকত অতিক্রম করে পাটুয়ারটেক। সৈকতজুড়ে প্রবালপাথরের সারি। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সেই পাথরের উপর। সত্যি এক অসাধারন অনুভূতি, যা বলে কাউকে বোঝানো যাবে না। বিস্তৃত সমুদ্র আর তার সঙ্গে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে মন-প্রান জুড়িয়ে যায়। খানিক বাদেই বিকেল গড়িয়ে পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার পালা। তবে আমাদের ঘুরে দেখা তখনও শেষ হয়নি। বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে রাত আটটার দিকে আবার চান্দের গাড়িতে করে হোটেলে ফেরার পালা। পথে যেতে যেতে পাহাড়ের উপরে জ্বলছে আলো।

ছোট-ছোট ঘর,এ ঘরে বাস করছেন পাহাড়িরা। যা দিনের বেলা দেখা যায় না। হোটেলে ফিরে জামা-কাপড় পরিবর্তন করে বেরিয়ে পরলাম সাগর পারে। সাগর পারে গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকা, বাতাসের শব্দ শোনা। আশে-পাশে নানা মানুষের কথপোকথোন। সাগর পাড়ে বসে থাকলে মাথায় কোন টেনশন তাকে না। বিভিন্ন স্থানে ঘুরেফিরেই দুইটি দিন পার করলাম। এখন বাড়িতে ফেরার পালা। কক্সবাজার থেকে বরিশালের উদ্যেশে রওয়া হয়েছি বিকেল সাড়ে তিনটায়। সন্ধ্যারাত নয়টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে বাস কাউন্টারে থামলো বাস। বাস থেকে হুরহুর করে নেমেছে সকল যাত্রী যাত্রা বিরতির জন্য। সেই সাথে আমার বড় ভাই নিখিল দাদা, সালাম ভাই ও আমিসহ আরো অনেকে নেমে পড়লো বাস থেকে। বাস কাউন্ডার থেকে পাঁচগজ দূরত্বে সোহাগ বাস কাউন্ডারের সামনে দেখলাম এক পাগল মা তিন বছরের একটি শিশু ও কোলে তিন মাসের আরোকটি শিশু নিয়ে বসে আছে। তীব্র দাবদাহ গরমের মধ্যে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে বসে আছেন পাগল (মা)। কাছে গিয়ে দেখলাম তিন বছরের শিশুটাকে দুধ চায়ের মধ্যে শুকনো রুটি ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এখানে কেন শিশু দুইটির মা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথার উত্তর দেন নি। শুধু মুখের পানে চেয়ে আছেন। আর কেমন যানো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

কোন কথার উত্তর দেন না। সন্তানদের পিতার কথাও জানতে চাইলাম তারও কোন উত্তর নেই। চা দিয়ে রুটি তিন বছরের শিশুটিকে খাওয়ানো পড়ে সে দাড়িয়ে ছোট্ট শিশুকে কোল থেকে উঠানো চেষ্টা করেন কিন্তু শিশুটি ঘুমিয়ে আছেন। মা পাগল হলেও ঠিকই সন্তানদের যত্ন করছেন। পাশের আর এক ভিক্ষুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওর কেউ নেই। এই কাউন্টারের সামনে ওদের বাড়ি-ঘর। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে এখানে দেখা যায়। ছোট্ট শিশুটিকে আমার কোলে দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে। ঠিকমতো খেতেও পায়না। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে একটি সন্তানের জন্য কত না কষ্ট করেন। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন। আসলে আমরা মানুষ হবো কবে?

সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে এক মর্মান্তিক ঘটনাও দেখলাম। আল্লাহ আমাদের সকলের সু-বুদ্ধির উদয় হোক। সকাল সাতটায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ এসে পৌছানোর পরে যে যার মতো করে বাড়িতে ফেরার তাড়া। একরম আয়োজন প্রতিবছর হোক এবং আমরা মিলেমিশে বিভন্ন স্থান ঘুরতে পারি। এই হোক আমার প্রত্যাশা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঘুরে এলাম দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

আপডেট সময় : ০৮:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

ঘুরতে কার না ভালো লাগে। তাও যদি হয় সাগর পাড়ে। এই তপ্তরোদে সারাদিন মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন একটু বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় নিজেকে বিশ্রাম নিতে মন চায়। তাই ক্লান্ত পথিক খাঁ খাঁ রোদে বিশ্রাম নিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার উপর তপ্তময় রোদ আবার খানিকটা পরে এক পশালা বৃষ্টি। তেমনি ক্লান্তময় দূর করতে এবং সাগর, পাহাড়, ঝর্না দেখতে ও উপভোগ করতে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

ভ্রমনপিপাসুদের পছন্দের জায়গা হলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ঘুরতে যান পর্যটন নগরী কক্সবাজার। একটি আর্থিক সংগঠনের আয়োজনে দুইদিন ব্যাপী প্রশিক্ষন নিতে যাওয়া হয় কক্সবাজার। দুঃখের বিষয় আমাদের দুইদিনের অনুষ্ঠানটি হয়নি। তবে কি ঘুরে-ফিরে দেখা তো আর বাদ দিতে পারি না। যাই হোক মুল কথা হলো- আমার বঢ়র ভাই নিখিল চন্দ্র মিস্ত্রির নেতৃত্বে আমার ক’জন মিলে সম্প্রতি পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কক্সবাজারের উদেশ্যে চট্টগ্রাম এসি গাড়িতে উঠলাম।

জীবনে প্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে যাওয়া, মনে নানা কৌতূহল তো রয়েছে। মনে মনে নানা চিন্তা ভাবনা। আবার বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রে গোছল করতে নেমে প্রান হারিয়েছে এমন সংবাদও শোনা যায় বিভিন্ন সময়ে। যাই হোক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কিছু একটা করা যাবে। প্রথম যাত্রা হিসিবে গাড়িতে করে যাচ্ছি তো যাচ্ছি পথ তো ফুরাতে চাচ্ছে না।

পটুয়াখালী থেকে যাত্রা পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ, ঘন্টা তিনে আটকে রইলাম। আবার যাত্রা শুরু, পথিমধ্যে খাবার বিরতি। আবার ছুটে চলা। পথিমধ্যে আমাদের টিমের একজন সদস্য ঢাকা থেকে গাড়িতে উঠবে। রাত পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে উঠলো আমাদের বয়োজ্যেষ্ট ব্যাক্তি। আবার যাত্রা শুরু, যাত্রা পথে ঘুমিয়ে পড়ি। আবার জেগে উঠি। এভাবে সকাল আটটারদিকে চট্টগ্রাম বাসষ্টান্ডে পৌছলো গাড়ি। সকালে কিছু খেয়ে আবার গাড়ির জন্য অপেক্ষা। সকাল সোয়া নয়টায় গাড়িতে যেতে হবে কক্সবাজার। আবারও যাত্রা শুরু। চট্টগ্রাম বাসষ্টান্ড থেকে কয়েক কিলোমটির দূরে যেতেই দেখা মেলে পাহাড় আর পাহাড়। দেখলে মনে হয় পাহাড়ের বুক চিড়ে আকাঁ-বাঁকা সড়ক বয়ে চলেছে। পাহাড়ের উপরে বসবাস করছে পাহাড়িরা। দেখা যায়, কেউ কাঁদে করে বয়ে পাহাড় উপরে উঠছে। তাদের এক বৈচিত্র্যময় জীবন। সাড়ে পাঁচঘন্টার পরে দুপুর দেড়টারদিকে কক্সবাজার গিয়ে পৌছলাম।

এবারে হোটেল খোঁজার পালা। প্রথমে আমাদের হোটেল খুজঁতে অসুবিধা হলেও আমাদের বিজ্ঞ ব্যাক্তি নিখিল দাদা খুঁজে বের করলো হোটেল ‘ভিজটা বে’। হোটেলের যাবতীয় কাজ সেরে লিফট দিয়ে ভবনের ছয়তলায় আমাদের রুমে গিয়ে পৌছলাম। রুমে পৌছে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারন রাতে না ঘুমানোর ফলে। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আমারদের মিশন সাগর দেখা। রুম থেকে বের হয়ে কক্সবাজার বিচে চলে গেলাম। তখন বিকলে পাঁচটা বাজে।

এবারে নানা কৌতুহলেও অবসান হলো সাগর পাড়ে এসে। ঘুরতে ঘুরতে রাত আটটা বাজে। আজকের দিনে মতো সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ও আগামীকালের কি কাজ আছে তা নিয়ে শলাপরামর্শ। যাই হোক রাতে অনুষ্ঠানের টি-শার্ট ও ব্যাগ দেওয়া হলো কর্তৃপক্ষ তেকে। সকালে ফাইনালি শুনলাম আমাদের অনুষ্ঠানটি হচ্ছে না। কি আর করার এখন সারাদিন ঘুরে দেখা সাগর-পাাহাড়। বিকলেই একটি চান্দের গাড়িতে করে চলে যাই হিমছড়িসহ ৪-৫টি পয়েন্টে। যেতে যেতে দেখা মেলে ছোট-বড় অনেক পাহাড়ের। আবার একটা পাহাড় থেকে আরেকটা পাহাড়ের দূরাত্বও অনেক। নিচ থেকে দেখলে মনে হয় লাফিয়ে যাওয়া এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। তবে পাহারের চূড়ার উপরে উঠলে দেখা যায় অনেক দূরাত্ব। টিকিট কেটে হিমছড়ি পাহাড়ে উঠা। তবে আমার এই প্রথমবার পাহাড়ে উঠা। নেই কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা। সিঁড়ি বেড়ে উপরে উঠছি। কিছু দূর উঠতেই কেমন যানো হাটুর জোর কমে আসছে। তারপরও হাল ছাড়িনি। কয়েকটি সিঁিড়র পার হয়ে উপরে উঠতে দেখা মেলে এক অপরূপ সৌন্দার্যের।

তিনদিকে পাহাড় আর পাহাড়, অন্যদিকে সাগরের বিশাল জলরাশি। হিমঝড়ির পাহাড় থেকে একটা মানুষকে ছোট্ট একটা পিপঁড়ের মতো মনে হয়। পাহাড়ে চূড়ায় উঠে ছবি তোলা। এখানে বহু মানুষ ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে,স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার জন্য। পাহাড়ে উঠতে কষ্ট হলে ওখানকার কর্তৃপক্ষ তাকে দুটি লাঠি দিয়ে দেয়,যাতে সে লাঠি ভর করে পাহাড়ে উঠতে পারে। তবে পাহাড়ে উঠা একটু কষ্ট হলেও নামতে মোটেও কষ্ট হয়নি। পাহাড় থেকে নেমেই হাতের বা দিকে রাস্তা দিয়ে যেতেই রয়েছে হিমঝড়ি ঝর্না। কোথা থেকে এক পানি পরছে তা কেউ বলতে পারছে না। এমটাই বলেছেন অনেকেই। ইনানী সৈকত অতিক্রম করে পাটুয়ারটেক। সৈকতজুড়ে প্রবালপাথরের সারি। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সেই পাথরের উপর। সত্যি এক অসাধারন অনুভূতি, যা বলে কাউকে বোঝানো যাবে না। বিস্তৃত সমুদ্র আর তার সঙ্গে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে মন-প্রান জুড়িয়ে যায়। খানিক বাদেই বিকেল গড়িয়ে পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার পালা। তবে আমাদের ঘুরে দেখা তখনও শেষ হয়নি। বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে রাত আটটার দিকে আবার চান্দের গাড়িতে করে হোটেলে ফেরার পালা। পথে যেতে যেতে পাহাড়ের উপরে জ্বলছে আলো।

ছোট-ছোট ঘর,এ ঘরে বাস করছেন পাহাড়িরা। যা দিনের বেলা দেখা যায় না। হোটেলে ফিরে জামা-কাপড় পরিবর্তন করে বেরিয়ে পরলাম সাগর পারে। সাগর পারে গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকা, বাতাসের শব্দ শোনা। আশে-পাশে নানা মানুষের কথপোকথোন। সাগর পাড়ে বসে থাকলে মাথায় কোন টেনশন তাকে না। বিভিন্ন স্থানে ঘুরেফিরেই দুইটি দিন পার করলাম। এখন বাড়িতে ফেরার পালা। কক্সবাজার থেকে বরিশালের উদ্যেশে রওয়া হয়েছি বিকেল সাড়ে তিনটায়। সন্ধ্যারাত নয়টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে বাস কাউন্টারে থামলো বাস। বাস থেকে হুরহুর করে নেমেছে সকল যাত্রী যাত্রা বিরতির জন্য। সেই সাথে আমার বড় ভাই নিখিল দাদা, সালাম ভাই ও আমিসহ আরো অনেকে নেমে পড়লো বাস থেকে। বাস কাউন্ডার থেকে পাঁচগজ দূরত্বে সোহাগ বাস কাউন্ডারের সামনে দেখলাম এক পাগল মা তিন বছরের একটি শিশু ও কোলে তিন মাসের আরোকটি শিশু নিয়ে বসে আছে। তীব্র দাবদাহ গরমের মধ্যে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে বসে আছেন পাগল (মা)। কাছে গিয়ে দেখলাম তিন বছরের শিশুটাকে দুধ চায়ের মধ্যে শুকনো রুটি ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এখানে কেন শিশু দুইটির মা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথার উত্তর দেন নি। শুধু মুখের পানে চেয়ে আছেন। আর কেমন যানো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

কোন কথার উত্তর দেন না। সন্তানদের পিতার কথাও জানতে চাইলাম তারও কোন উত্তর নেই। চা দিয়ে রুটি তিন বছরের শিশুটিকে খাওয়ানো পড়ে সে দাড়িয়ে ছোট্ট শিশুকে কোল থেকে উঠানো চেষ্টা করেন কিন্তু শিশুটি ঘুমিয়ে আছেন। মা পাগল হলেও ঠিকই সন্তানদের যত্ন করছেন। পাশের আর এক ভিক্ষুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওর কেউ নেই। এই কাউন্টারের সামনে ওদের বাড়ি-ঘর। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে এখানে দেখা যায়। ছোট্ট শিশুটিকে আমার কোলে দিয়ে খাবার সংগ্রহ করে। ঠিকমতো খেতেও পায়না। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে একটি সন্তানের জন্য কত না কষ্ট করেন। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন। আসলে আমরা মানুষ হবো কবে?

সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে এক মর্মান্তিক ঘটনাও দেখলাম। আল্লাহ আমাদের সকলের সু-বুদ্ধির উদয় হোক। সকাল সাতটায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ এসে পৌছানোর পরে যে যার মতো করে বাড়িতে ফেরার তাড়া। একরম আয়োজন প্রতিবছর হোক এবং আমরা মিলেমিশে বিভন্ন স্থান ঘুরতে পারি। এই হোক আমার প্রত্যাশা।