অসহায় দুস্থদের ভিজিডি’র চালে ইউপি সদস্যদের থাবা

- আপডেট সময় : ১০:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর মহিপুর থানার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে অসহায় ও দুস্থ মহিলাদের বিশেষ বরাদ্দ ভিজিডি চাল দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। সরেজমিনেও মিলেছে সত্যতা। তবে অনেকেরই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউপি সদস্য।
এসব অভিযোগের অনুসন্ধানে গেলে বিস্তার অভিযোগ পাওয়া যায় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ডবলুগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল গাজী ও অপর ইউপি সদস্য জসিম ফরাজীর বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভিজিডি চাল দেওয়ার নামে এলাকার অনেকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেরই টাকা ফেরত দিয়েছেন। যা স্বীকারও করেছেন প্রতিবেদকের কাছে।
অভিযুক্ত ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জসিম ফরাজীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে ভিজিডি কার্ডের চাল দেওয়ার কথা বলে তিনিও অনেকের কাছ থেকে ৫’শ ১ হাজার এমনকি দেড় হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন জনপ্রতি ২’শ টাকা করে গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ উঠিয়েছেন। তবে কেউ কেউ ৫০ টাকাও দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকা চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইউপি সদস্য জসিম ফরাজী (লাদেন জসিম) ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। তবে ৫ আগস্টের আগে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারী ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সরকার যদি আমাদের চাল দেয়, তাহলে মেম্বার কেন টাকা নেবে? অথচ আমিসহ অনেকের কাছ থেকেই বাবুল মেম্বার ১ হাজার করে টাকা নিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী আছিয়া বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার স্বামীর অসুস্থতার কারণে আমি অনেক কষ্টে চলি। ভিজিডির চাল পেতে জসিম মেম্বার ১হাজার টাকা চেয়েছে। বাধ্য হয়ে ধার করে টাকা দেই। এখন বলছে, এটা নিয়ম।’
আরেক ভুক্তভোগী গৃহবধূ জামিলা খাতুন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘সবসময় ২০০ করে নেয়, এজন্য ৫ মাসের চালের জন্য ১,০০০ টাকা নিয়েছে। তবে চাউল পেয়েছি ৪ মাসের।’
রফিক নামে আরেকজন অভিযোগকারী বলেন, ছয় মাসের চাল দেওয়ার কথা বলে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছে বাবুর মেম্বার। তবে চাল দিয়েছেন চার মাসের। ‘আমি বাড়ি ছিলাম না, আমার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জসিম মেম্বার, বাবুল মেম্বার ভিজিডি কার্ডের চাল বাবদ ১ হাজার টাকা করে নিয়েছে এটা সত্য। এর সাথে বিএনপির লোকজনও জড়িত।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বাবুল গাজী বলেন, কয়েকজন লোকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছিলাম খরচ বাবদ। পরে তাদের সকলের টাকা ফেরত দিয়েছি।
অপর অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জসিমের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খরচ বাবদ ২’শ টাকা করে নিয়েছি। ৫’শ ১ হাজারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হেদায়েত উল্লাহ জোহাদী বলেন, ভিজিডির চালের নামে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুইজন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদেরকে ইতোমধ্যেই পরিষদে নোটিশ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন ভিজিডি চালে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।