পায়রা বন্দরের উচ্ছেদকৃত ছ-আনিপাড়ার ৬টি রাখাইন পরিবারের পুনর্বাসনের দাবিতে আলোচনা সভা

- আপডেট সময় : ০৪:২৭:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা বন্দর নির্মাণের সময় উচ্ছেদ হওয়া ছ-আনিপাড়ার ৬টি রাখাইন পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবিতে আজ ২৬ মে ২০২৫, সোমবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে “নাগরিক উদ্যোগ”।
মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এএআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মেইনথিন প্রমীলা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উচ্ছেদকৃত পরিবারের সদস্য চিং ধামো রাখাইন এবং আদিবাসী ফোরাম বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি মংচোথিন তালুকদার।
চিং ধামো রাখাইন বলেন, “পায়রা বন্দর নির্মাণের দ্বিতীয় দফায় জমি অধিগ্রহণের সময় আমাদের ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বসতভিটা অধিগ্রহণ করা হয় কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই। গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু অর্থ পেলেও জমির প্রকৃত ক্ষতিপূরণ এখনও পাইনি। ৩৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। প্রথমে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া দেওয়া হলেও ৬ মাস পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানাই।”
সভাপতি অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “রাখাইনদের এমনভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে, যেখানে তারা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মেনে চলতে পারছে না। তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারাকে ধ্বংস করে একটি বহুতল ভবনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতি অবিচার রোধ করতে হবে। আমি নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতকে স্মারকলিপি পাঠিয়েছি, তিনি জানিয়েছেন বিষয়টি তিনি বিবেচনায় নিচ্ছেন।”
শামসুল হুদা বলেন, “পায়রা বন্দরের জন্য বিপুল ব্যয় করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতি পূরণ করা হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ আইন সংবিধান পরিপন্থী। এ আইন সংস্কার করতে হবে এবং উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর উপযুক্ত পুনর্বাসনের পাশাপাশি সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে।”
জাসদ নেতা নাজমুল হক প্রধান বলেন, “দেশটিকে নানা জাতিগোষ্ঠীর মিলনস্থল করে একটি ফুলের বাগান হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল। অথচ এখন ছয়টি রাখাইন পরিবারকেই একটি বস্তিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আগে দেশের মানুষকে দিতে হবে, তারপর অন্যদের।”
মেইনথিন প্রমীলা বলেন, “পটুয়াখালীর এই ছয় রাখাইন পরিবারের উচ্ছেদ উন্নয়নের নামে কীভাবে আগ্রাসন চালানো হয় তার নির্মম উদাহরণ। মৃতদেহ সৎকারের স্থান, পুকুর সবই দখল হয়ে গেছে। সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু দখল থামে না, শুধু দখলদার পাল্টায়।”
জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে—আদিবাসীদের আলাদা করে ভাবার। এই মানসিকতা থেকে বারবার তারাই উচ্ছেদের শিকার হন। আজও তারা নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অথচ সেখানে তৈরি করা কর্মকর্তাদের আবাসনে কেউ থাকেন না। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
আলোচনা সভা শেষে ছ-আনিপাড়ার উচ্ছেদকৃত ৬টি রাখাইন পরিবারের পক্ষ থেকে নৌপরিবহন উপদেষ্টার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।