দুই যুগ ধরে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে বাঁদুড়
চিঁ চিঁ শব্দ আর প্রাণপণ ছুটে চলার দৃশ্য প্রায় ২৫ বছরের

- আপডেট সময় : ১২:১৩:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে
সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বাদুড়ের চিঁ চিঁ শব্দে মুখর থাকা যায়গাটি কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সোলায়মান মুন্সির বাড়ি। হাজার হাজার বাঁদুড় রেইনট্রি, তেঁতুল গাছ আর তালগাছে ঝুঁলে আছে। গাছে পাতা নয়, শুধুই বাঁদুড় আর বাঁদুড়। ছুটে চলে এ দিক সেদিক। এ যেন বাড়ী নয়! যেন বাদুড়ের রাজ্য। গড়ে তুলেছে বাদুড়ের বিশাল সাম্রাজ্য।
উঁচু গাছের ডালে ডালে বাঁদুড়ের ঝুৃঁলে থাকা ছিল এক সময়ে স্বাভাবিক দৃশ্য। নিশাচর প্রাণী হিসেবে ছিল এদের ছিল অবাধ ছুটে চলা। রাত হলেই যে কোনো ফলের প্রতি আক্রমণই করাই এদের কাজ। এমন দৃশ্য আর তেমন চোখে পড়েনা। নির্জন গাছ পালা, খাবার আর গরমের তীব্রতা বাড়ায় এদের উপস্থিতি দিন দিন কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসত বাড়ীর পিছনে পুকুরের ধারে রয়েছে গাছ গাছালি। সেই গাছে চোঁখ দিলেই দেখা যায় পা উপরে তুলে নিচে মাথা দিয়ে ঝুঁলে আছে বাঁদুড়। পা যেন গাছের সাথে হুক দিয়ে আটকে রাখা। নিশাচর প্রাণীগুলো রাত হলে খাবারের সন্ধ্যানে বের হয়ে যায় আর ভোরের আলো উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে চলে আসে হাজার হাজার বাদুড় নীড়ে।
চিঁ চিঁ শব্দ আর প্রাণপণ ছুটে চলার দৃশ্য প্রায় ২৫ বছর কিংবা ৩০ ধরে। এগুলোকে পরিবারের সদস্য হিসেবে মনে করেন বাড়ীর মালিক। স্থানীয়রা আর বাড়ীর পাশে প্রতিবেশীরাও অভ্যস্থ হয়ে গেছে এমন দৃশ্য দেখে। তাদেরও ঘুম আসেনা বাঁদুড়ের চিঁ চিঁ শব্দ ছাড়া। একটা সময় বাঁদুড়কে বিরক্ত করলেও এখন বাঁদুড় সচরাচর চোখে না পড়ার কারনে শিক্ষার্থীসহ গ্রামের লোকজন মাঝে মাঝে বাঁদুড় দেখতে এ বাড়িতে ছুটে আসে।
প্রতিবেশী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি তাদের ডাকাডাকি শুনতে শুনতে। তাদের ডাকাডাকি শুনে ঘুম পড়ি আর তাদের ডাকাডাকি শুনে ঘুম ভাঙি। তাদের ডাক না শুনলে আমাদের ঘুম আসেনা।
শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান বলেন, আমরা মাঝে মাঝে কিচির মিচির শব্দ শুনতে সোলায়মান মুন্সির বাড়ী যাই। আমাদের ওরা ডিসটার্ব করেনা, আমরাও করিনা।
প্রতিবেশী হাফেজ সাইদুল হক মুন্সি বলেন, আমাদের বাড়ীর ফলফলাদি নষ্ট করলেও ওদের আমরা তাড়া করিনা। ওদের ডাক ও উড়ার দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করে। আমরাও ওদের সাথে একটা ভাব জমিয়েছি।
বাড়ীর মালিক মো. ফারুক খাঁন বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যদের মতই ওরা। ৩০ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে আমাদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়া থাকে। আমরাও ক্ষতি করিনা, ওরাও কোন ক্ষতি করেনা।
সাপ ও বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা এনিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালীর কলাপাড়া শাখার টিম লিডার মোঃ বায়েজিদ মুন্সী কালবেলাকে বলেন, বন্য প্রাণীদের যথাযথ বিচরণের সুযোগ দিলে এদের বিস্তার বাড়বে। বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে কাজ করছে। পাশাপাশি প্রাণী রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান করেন।