কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালে নেই চিকিৎসক, সেবা বঞ্চিত উপকূলের দেড় লাখ মানুষ

- আপডেট সময় : ০৫:৫১:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ৪২৬ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী সাগর কন্যা কুয়াকাটা এর পাশেই অবস্থিত কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক ও উপকূলের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের দাবিতে ২০১২ সালে সরকার এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে শুরু থেকেই নানা সংকটে জর্জরিত এ হাসপাতালটি। চিকিৎসক সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের বাইরের যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা ও নোংরা, জরাজীর্ণ। চিকিৎসকের সকল পদই শূন্য। হাসপাতালটিতে নেই কোন ধরনের যন্ত্র পাতি। ওয়ার্ড ও শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। স্বাস্থ্য পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। আউটডোরে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগীর চিকিৎসা নেয়।
প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু নামেই ২০ শয্যার হাসপাতাল। কোনো শয্যা সেবা দেওয়া হয় না এখানে। কোঠা থাকলেও নেই কোন এম,বি,বি,এস ডাক্তার। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবলেট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১জন ওয়ার্ড বয় দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।
হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় দেড় লাখ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে তিন একর জমির ওপর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুয়াকাটা হাসপাতালটি। মূলত গর্ভবর্তী সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবাসহ বিভিন্ন সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর ছিটেফোঁটাও নেই হাসপাতালে। বর্তমানে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেয়া হচ্ছে না।
চিকিৎসা নিতে আসা মম্বিপারা গ্রামের আসমত আলী বলেন, হাসপাতালটি শুধু নামেই আছে, আমাদের এলাকার মানুষের কোন কাজে আসছে না। আমরা অসুস্থ হলে এখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কলাপাড়ায় চিকিৎসা নিতে হয়। এখানে আসলেই কোন ধরনের চিকিৎসা না দিয়ে কলাপাড়া পাঠিয়ে দেন। আমরা চাই হাসপাতালটি চিকিৎসা দেওয়ার উপযোগী করা হোক।
নেই ওয়ার্ড ও ওষুধের বরাদ্দ। শুধু অবকাঠামো হিসেবেই টিকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কট ছাড়াও রয়েছে জনবল সঙ্কটও। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানা যায়, হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ শূণ্য পদগুলো হলো জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস), আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল টেক: (ল্যাব:), সর্মাসিস্ট, সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম হিসাব মুদ্রাক্ষরিক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব অ্যাটেনড্যান্ট, আয়া, দারোয়ান, এম,এল,এস,এস, ঝাড়ুদার ও কুক।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুয়াকাটা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারের জন্য একজন গাইনি সার্জন ও একজন অবেদনবিদ প্রয়োজন। রোগীরা জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ২২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে যেতে হয়।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া কালবেলাকে বলেন, শুধু কুয়াকাটা নয়! সমগ্র পটুয়াখালী জেলায় ডাক্তারের চরম সংকট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংকট সমাধান হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, অনেক রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতালে সাথে কথা বলে জেনেছি, জনবল ও চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। লোকবল বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো যাতে অতি দ্রুত সংকট কেটে যায়। এবং সেবা প্রত্যাশীরা যাতে সঠিক সেবা পায়।