পটুয়াখালীর মহিপুরে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় ঘটেছে এক বিরল, চাঞ্চল্যকর ও মানবিকভাবে স্পর্শকাতর ঘটনা—চুরি যাওয়া স্বর্ণের চেইন এক ডাকাত কোরআন হাতে শপথ না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়! এ ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) গভীর রাতে মহিপুর সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুস সালাম আকনের বাড়িতে। অস্ত্রধারী ১০-১২ জনের এক ডাকাত দল গভীর রাতে কেচিগেট ভেঙে ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের হাত বেঁধে জিম্মি করে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন লুট করে।

ডাকাত দলের লুটপাটের মুহূর্তে গৃহকর্তা লুনা আকনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার তাসমি (২৮) জানান, “তারা আমার সন্তানকে সামনে বসিয়ে তার মাথায় হাত রেখে শপথ করায়। আমি বলি, আমাদের ১১টি স্বর্ণের চেইন আছে। তারা সব নিয়ে যায়। কিছু সময় পর চেইনগুলো গুনে দেখে মোট ১০টি। তখন তারা আবার জিজ্ঞাসা করে এবং আমি পুনরায় নিশ্চিত করি, ১১টি চেইনই ছিল।”

এখানেই শুরু হয় অপ্রত্যাশিত এক নাটকীয়তা। ডাকাত দলের সরদার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দলের সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে এবং বলেন, “কেউ বেইমানি করবা না। সবাই কোরআন হাতে শপথ করো।” তখন দলের এক সদস্য চুপ থাকেন এবং কোরআন হাতে শপথ না করে নিজের কাছে থাকা চেইনটি সরদারের হাতে তুলে দেন।

স্থানীয়দের মতে, ডাকাতির ঘটনায় যেমন ভয়াবহতা ছিল, তেমনি এই শপথ ও চেইন ফেরতের ঘটনা মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

ডাকাতদলের নেতার কথাবার্তা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, তারা ভিন্নস্থান থেকে এসেছে। কারণ একপর্যায়ে সরদার মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলে বলেন, “কি রে, কি তথ্য দিলি? এই বাড়িতে তেমন কিছু তো পাইলাম না।”

ডাকাত দল প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ২ লাখ ২ হাজার টাকা এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। মোবাইল ফোনগুলো শেষ পর্যন্ত পেছনের পুকুরে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয় সরদার।

ঘটনার পরপরই মহিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, “তদন্ত চলমান রয়েছে, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশি টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।”

এ ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি, ডাকাত দলের অবস্থান ও স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার হালনাগাদ নিয়ে এলাকাবাসীর উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে।