ঢাকা ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ঘন ঘন বৈরী আবহাওয়ায় হুমকিতে মৎস্য পেশা Logo ঋণ বাতিল করে জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে কলাপাড়ায় মানববন্ধন সাইকেল শোভাযাত্রা Logo ‎মির্জাগঞ্জে দাদীর সাথে অভিমানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা Logo তিন বছর ধরে ঝুঁলে আছে আয়রণ ব্রিজ, ভোগান্তি চরমে  Logo মৎস্যজীবী দল নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিবের নিন্দা Logo বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে, উত্তাল সমুদ্রে মাতোয়ারা হাজারো পর্যটক Logo মির্জাগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় বাদী শ্রীঘরে Logo কুয়াকাটায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ, ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের আঘাতে জেলের মৃত্যু Logo মির্জাগঞ্জে ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Logo মহিপুরে পাওনা টাকার জেরে জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

পর্যটককে মারধর, টাকা মোবাইল হাতিয়ে নিলেন যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবি দলের নেতারা

কলাপাড়া প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৪৭৮ বার পড়া হয়েছে

কুয়াকাটায় বাদল মোল্লা নামের এক পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নিলেন যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবি দলের নেতারা। রবিবার গভীররাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল “আপন ভূবনে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বাদল মোল্লা জানান, পরিবারের সাথে অভিমান করে গত ১৭ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আপন ভূবনে ওঠেন। মন খারাপ থাকায় ১’শত টাকা দিয়ে এক ভ্যান চালককে গাঁজা আনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর ভ্যানচালক ফিরে এসে পেপারের কাগজে টিস্যু মুড়িয়ে পর্যটক বাদল মোল্লার হাতে দেয়ায় সাথে অভিযুক্ত নেতাদের সহযোগিতা আল-আমিন, মোস্তাফিজ, বেল্লালসহ অজ্ঞাত আরও দু’জন তাকে মারধর শুরু করেন।

পরবর্তীতে পৌর শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ও ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবুবক্কর পর্যটক বাদল মোল্লাকে হোটেলের রিসিভশনে নিয়ে আবারও মারধর করেন।

একপর্যায়ে তারা পর্যটক বাদল মোল্লার রুমে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে ৪ পিস ইয়াবা ও ২২ হাজার টাকা পায়। এ সময় বাদল মোল্লা ২২ হাজার হোটেল ম্যানেজার মিজানের কাছে দেন। এ সময় বাদল মোল্লার ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। হোটেল ম্যানেজার মিজানকে হুমকি দিয়ে মৎস্যজীবী দল নেতা আবুসালেহ টাকা নিয়ে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবক্করকে দেন। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লার মোবাইল ফোন ২টি ফিরিয়ে দিয়ে তারা হোটেল ত্যাগ করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেন।

হোটেল ম্যানেজার মিজান বলেন, গভীররাতে আমার হোটেলের সামনের রাস্তায় ডাকচিৎকার শুনে গিয়ে দেখি গেস্ট বাদল মোল্লাকে অভিযুক্তরা মারধর করছেন। আমি তাদেরকে হোটেলের রিসিভশনে আসার অনুরোধ করি। কিন্তু রিসিভশনে এসে তারা আমার গেস্টকে মারধর করেন এবং তার কক্ষে প্রবেশ করে ২৩ হাজার ৯’শ টাকা ও দুটি মোবাইল নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোবাইল দুটি ফেরত দিলেও টাকা নিয়ে চলে যান।

ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মোল্লা বলেন, আমার ব্যাগে ২২ হাজার টাকা এবং প্যান্টের পকেটে ছিল এক হাজার ৯’শ টাকা। ব্যাগের ২২ হাজার টাকা আমি হোটেল ম্যানেজারের কাছে দিয়েছি। তার কাছে তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি গতকাল থেকে না খেয়ে আছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত কুয়াকাটা পৌর মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ঘটনার সাথে জড়িত নয় দাবী করে বলেন, হোটেল ম্যানেজার আমার কাছে ২২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি টাকাটা ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবুবকরের কাছে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আমি জানিনা।

ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবকর বলেন, আমি আবুসালেহ’র কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছি। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লাকে ফেরত দিয়ে চলে গেছি। এদিকে হোটেল কক্ষে বসে শ্রমিকদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধাকে পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন সহযোগীরা এমনটাই দাবী করেছেন ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মৃধা। তবে জসমি মৃধা বলেছেন তার সামনে কেউ পুলিশ পরিচয় দেয়নি। পর্যটককে মারধরের কথা স্বীকার করে শ্রমিক দলের এই নেতা বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই ফয়সালা হয়েছে। পর্যটককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি মানিক ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সোমবার বিকেলে ফয়সালা হয়েছে। ওই পর্যটককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে সেটি তিনি বলতে নারাজ।

এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফারুক বলেন, যুবদলের কোন নেতা এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো আবাসিক হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন। দলের কোনো নেতাকর্মীর যাওয়ার সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, আমার নেতা তারেক রহমানকে নির্দেশ অনুয়ায়ী কোনো দুষ্কৃতিকারীর স্থান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুয়াকাটা পৌর বিএনপি’র সভাপতি আঃ আজিজ মুসুল্লি বলেন, অপরাধীদের বিএনপিতে কোন স্থান নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পর্যটককে মারধর, টাকা মোবাইল হাতিয়ে নিলেন যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবি দলের নেতারা

আপডেট সময় : ০৮:৩০:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

কুয়াকাটায় বাদল মোল্লা নামের এক পর্যটককে মারধর করে টাকা হাতিয়ে নিলেন যুবদল, শ্রমিকদল ও মৎস্যজীবি দলের নেতারা। রবিবার গভীররাতে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল “আপন ভূবনে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বাদল মোল্লা জানান, পরিবারের সাথে অভিমান করে গত ১৭ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আপন ভূবনে ওঠেন। মন খারাপ থাকায় ১’শত টাকা দিয়ে এক ভ্যান চালককে গাঁজা আনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পর ভ্যানচালক ফিরে এসে পেপারের কাগজে টিস্যু মুড়িয়ে পর্যটক বাদল মোল্লার হাতে দেয়ায় সাথে অভিযুক্ত নেতাদের সহযোগিতা আল-আমিন, মোস্তাফিজ, বেল্লালসহ অজ্ঞাত আরও দু’জন তাকে মারধর শুরু করেন।

পরবর্তীতে পৌর শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধা, মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ও ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আবুবক্কর পর্যটক বাদল মোল্লাকে হোটেলের রিসিভশনে নিয়ে আবারও মারধর করেন।

একপর্যায়ে তারা পর্যটক বাদল মোল্লার রুমে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে ৪ পিস ইয়াবা ও ২২ হাজার টাকা পায়। এ সময় বাদল মোল্লা ২২ হাজার হোটেল ম্যানেজার মিজানের কাছে দেন। এ সময় বাদল মোল্লার ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। হোটেল ম্যানেজার মিজানকে হুমকি দিয়ে মৎস্যজীবী দল নেতা আবুসালেহ টাকা নিয়ে ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবক্করকে দেন। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লার মোবাইল ফোন ২টি ফিরিয়ে দিয়ে তারা হোটেল ত্যাগ করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেন।

হোটেল ম্যানেজার মিজান বলেন, গভীররাতে আমার হোটেলের সামনের রাস্তায় ডাকচিৎকার শুনে গিয়ে দেখি গেস্ট বাদল মোল্লাকে অভিযুক্তরা মারধর করছেন। আমি তাদেরকে হোটেলের রিসিভশনে আসার অনুরোধ করি। কিন্তু রিসিভশনে এসে তারা আমার গেস্টকে মারধর করেন এবং তার কক্ষে প্রবেশ করে ২৩ হাজার ৯’শ টাকা ও দুটি মোবাইল নিয়ে যান। পরবর্তীতে মোবাইল দুটি ফেরত দিলেও টাকা নিয়ে চলে যান।

ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মোল্লা বলেন, আমার ব্যাগে ২২ হাজার টাকা এবং প্যান্টের পকেটে ছিল এক হাজার ৯’শ টাকা। ব্যাগের ২২ হাজার টাকা আমি হোটেল ম্যানেজারের কাছে দিয়েছি। তার কাছে তারা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি গতকাল থেকে না খেয়ে আছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত কুয়াকাটা পৌর মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ ঘটনার সাথে জড়িত নয় দাবী করে বলেন, হোটেল ম্যানেজার আমার কাছে ২২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি টাকাটা ওয়ার্ড যুবদলের নেতা আবুবকরের কাছে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আমি জানিনা।

ওয়ার্ড যুবদল নেতা আবুবকর বলেন, আমি আবুসালেহ’র কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছি। পরবর্তীতে পর্যটক বাদল মোল্লাকে ফেরত দিয়ে চলে গেছি। এদিকে হোটেল কক্ষে বসে শ্রমিকদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম মৃধাকে পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন সহযোগীরা এমনটাই দাবী করেছেন ভুক্তভোগী পর্যটক বাদল মৃধা। তবে জসমি মৃধা বলেছেন তার সামনে কেউ পুলিশ পরিচয় দেয়নি। পর্যটককে মারধরের কথা স্বীকার করে শ্রমিক দলের এই নেতা বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই ফয়সালা হয়েছে। পর্যটককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি মানিক ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সোমবার বিকেলে ফয়সালা হয়েছে। ওই পর্যটককে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে সেটি তিনি বলতে নারাজ।

এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফারুক বলেন, যুবদলের কোন নেতা এ ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো আবাসিক হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন। দলের কোনো নেতাকর্মীর যাওয়ার সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, আমার নেতা তারেক রহমানকে নির্দেশ অনুয়ায়ী কোনো দুষ্কৃতিকারীর স্থান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে হবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুয়াকাটা পৌর বিএনপি’র সভাপতি আঃ আজিজ মুসুল্লি বলেন, অপরাধীদের বিএনপিতে কোন স্থান নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।