আরও এক ‘আয়নাঘরের’ সন্ধান

- আপডেট সময় : ০৭:২১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪৫৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে পরিচিত গুম-নির্যাতনের গোপন ঘাঁটিগুলোর সন্ধান মিলছে একের পর এক। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি সামরিক এলাকায় লুকিয়ে থাকা আরেকটি গোপন কারাগারের সন্ধান পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এক সময় সেখানে ছিল শক্ত দেয়ালে ঘেরা একটি ভবন। হঠাৎ করেই সম্প্রতি ওই ভবনের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়। দেয়াল ভাঙতেই বেরিয়ে আসে ভয়াবহ এক চিত্র— জানালাহীন, স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার ছোট ছোট অসংখ্য কক্ষ। এই গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব জানা যায় দীর্ঘ আট বছর গুম হয়ে থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেমের স্মৃতি ও বিবরণ থেকে।
বন্দি অবস্থায় চোখ বাঁধা থাকলেও তিনি নিয়মিত বিমান ওঠা-নামার শব্দ শুনে বুঝতে পারতেন, এটি বিমানবন্দরের আশপাশেই। তদন্তকারীরা সেই সূত্র ধরে গিয়ে পৌঁছান একটি সামরিক ঘাঁটিতে, যেখানে মূল ভবনের আড়ালে ছিল শক্ত প্রহরায় ঘেরা এই গোপন আয়নাঘর।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শতাধিক ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেন তদন্ত কর্মকর্তারা। অনেকেরই খোঁজ এখনও মেলেনি। অনেকের ধারণা, তাদের অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই আয়নাঘর পরিচালনা করতো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
তবে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, এসব সেনাবাহিনীর একক পরিচালিত ঘটনা। সেনাবাহিনী সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
মীর আহমেদ বিন কাসেম বিবিসি প্রতিনিধিদের নিয়ে যান সেই নির্জন কারাগারে, যেখানে তাকে আট বছর আটকে রাখা হয়েছিল। ভারী দরজা ঠেলে, নীচু হয়ে প্রবেশ করেন সেই কক্ষে। তিনি বলেন, “এটি ছিল জীবন্ত কবরের মতো। দিনের সঙ্গে রাতের পার্থক্য ছিল না। আলোহীন, স্যাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধময়। একজন সাধারণ মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।”
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন ৫০০-৭০০টি গোপন কারাগারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটি যে ছিল একটি সুপরিকল্পিত এবং সংগঠিত বন্দিশালা নেটওয়ার্ক, তা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা নীল টাইলস দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি প্রয়াত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের কারাগার। অপেক্ষাকৃত বড় এই কক্ষে ছিল একটি টয়লেটও।
ব্যারিস্টার আরমান বলেন, “গ্রীষ্মে ঘরটা হয়ে উঠতো দমবন্ধ পরিবেশ। দরজার নিচ দিয়ে মুখ রেখে হাওয়া নেওয়ার চেষ্টা করতাম। এটি মৃত্যুর থেকেও ভয়াবহ ছিল। তবে আমি চাই বিশ্ববাসী জানুক এই বাস্তবতা, যেন যারা হারিয়ে গেছে তাদের জন্য ন্যায়বিচার হয়। আর যারা বেঁচে আছে তারা ফিরে পায় মুক্ত জীবন।”
২০১৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় মীর আহমেদ বিন কাসেমকে গুম করা হয়। তার দাবি, পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ই তার এই পরিণতির কারণ।