ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো আইনজীবীদের আদালত বর্জন অব্যাহত

- আপডেট সময় : ১২:১৭:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জন অব্যাহত রেখেছে আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি, ফলে বিচারিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বুধবার (গতকাল) সকালে চৌকি আদালত আইনজীবী ভবনে এক জরুরি সভায় আইনজীবীরা সর্বসম্মতভাবে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। আইনজীবীদের দাবি, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায় দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনিয়মে জড়িত রয়েছেন। বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক রায় দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের অপসারণ না হলে আদালত বর্জনের পাশাপাশি আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত আইনজীবীরা।
কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হাফিজুর রহমান চুন্নু জানান, “ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও অনিয়মের বহু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিচারিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা তার অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।”
অপর এক আইনজীবী বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায় মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এতে বিচারপ্রার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ন্যায়বিচারের মূল ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এসব অনিয়ম প্রকাশ্যে আসুক এবং অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
আইনজীবীদের আন্দোলনের ফলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে বিচারপ্রার্থীদের ওপর। বহু বিচারপ্রার্থী আদালতে এসে শুনানি না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কলাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমি একটি পারিবারিক মামলার শুনানির জন্য আদালতে এসেছিলাম, কিন্তু আইনজীবীরা না থাকায় শুনানি হয়নি। কবে নাগাদ বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে, সেটিও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।”
আইনজীবীদের অভিযোগ ও আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আইনজীবীদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।”
আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন। তাদের দাবি, যতদিন পর্যন্ত অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে অপসারণ করা না হবে এবং সুষ্ঠু তদন্ত না হবে, ততদিন তারা আদালতে ফিরবেন না।
স্থানীয়দের মতে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টির সমাধান করা, যাতে ন্যায়বিচারের পথ সুগম হয় এবং আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।
ইমরান/এইচআরএ