কলাপাড়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের লড়াই অনুষ্ঠিত

- আপডেট সময় : ০৩:২৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৪১২ বার পড়া হয়েছে
গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহিষের লড়াই আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। বৃহস্পতিবার (২০ফেব্রুয়ারি) সকাল নয়টায় উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের দারোগা বাঁধ সংলগ্ন পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের বিলে আয়োজন করা হয় এই ঐতিহ্যবাহী লড়াই।
এবারের মহিষের লড়াইয়ে অংশ নেয় স্থানীয় প্রতিযোগী সোহেল মিরা ও মো. হেলালের বলি মহিষ। দুই মহিষের শক্তিমত্তার প্রদর্শনী দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো মাঠ পরিণত হয় দর্শকের মিলনমেলায়।
প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে রুদ্ধশ্বাস লড়াই। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই মহিষ। শিং গেঁথে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে উভয় মহিষই। এক পর্যায়ে সোহেল মিরার মহিষ কৌশলগতভাবে প্রতিপক্ষকে পিছু হটতে বাধ্য করে এবং বিজয়ী হয়। বিজয়ী মহিষ ও তার মালিককে অভিনন্দন জানিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা।
দীর্ঘদিন পর এ ধরনের লড়াইয়ের আয়োজন করায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। লড়াই দেখতে আসা একজন দর্শক বলেন, “শৈশবে আমরা এমন লড়াই দেখে বড় হয়েছি। আজ দীর্ঘদিন পর আবারও এই দৃশ্য দেখে দারুণ লাগছে।”
আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
মহিষের লড়াই এক সময় গ্রামবাংলার অন্যতম বিনোদনমূলক প্রতিযোগিতা ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব ও মেলা উপলক্ষে এ ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। তবে সময়ের পরিবর্তনে এই ঐতিহ্যবাহী লড়াই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, আগে গ্রামবাংলার প্রায় সব অঞ্চলে মহিষের লড়াই আয়োজন করা হতো। এতে মালিকরা তাদের বলি মহিষকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতেন। লড়াইয়ের দিন মহিষদের গায়ে সরিষার তেল মালিশ করা হতো, খাওয়ানো হতো পুষ্টিকর খাবার।
অনেকেই মনে করেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিয়মিত এ ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা উচিত। এতে গ্রামীণ সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হবে।
কলাপাড়ায় অনুষ্ঠিত এ লড়াই শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, এটি গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অংশ। দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আয়োজকরা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরণের আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, হাঁরিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এ ধরণের প্রতিযোগিতা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।