বিচার দাবি
কুয়াকাটায় সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে উপকূলের মানুষ

- আপডেট সময় : ০৩:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫২০ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিরন এর উপর হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে উপকুলের মানুষ। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিদিন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং সভা সমাবেশ করছে।
আজ রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০ টায় কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। অন্যদিকে বেলা ১১ টায় কুয়াকাটা চৌরাস্তায় পৌর ছাত্র দলের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও পটুয়াখালী জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের উদ্যোগে বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসক কার্য্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মিরনের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা না হবে ততদিন পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
শিক্ষক সাংবাদিক ও পর্যটন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মিরনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর এমন অতর্কিত হামলা চালানো হয়। ঘাতকরা মরে গেছে ভেবে তাকে ঘরের উঠানে ফেলে রেখে যায়। এমন নৃশংস ঘটনায় অবাক হয়েছে মানুষ।
রাজনীতির পাশাপাশি, সামাজিক সংগঠন, কলেজের শিক্ষক ও পর্যটন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মিরন একজন সদালাপী লোক। সবার সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। তার উপর আততায়ী হামলার ঘটনায় মানুষের মাঝে ভয়, আতংক সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছে। সাধারণ মানুষ বলছে যেখানে একজন সাংবাদিক শিক্ষক তার বাড়িতে নিরাপদ নয় সেখানে অন্যরা আরো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম মিরনের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তারা।
এ হামলার ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেফতার করতে না পারায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা বলছেন, হামলার ঘটনায় চারদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মাঝে।
সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম মিরন এর মামা পৌর বিএনপি’র সহ সভাপতি জসিম উদ্দিন বাবুল ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিক মিরন গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি এখনো কথা বলতে পারে না। সুস্থ হলে কে বা কারা হামলা করেছে তা জানা যাবে। তার অভিযোগ পুলিশ ও সিআইডির কাছে সবকিছু শেয়ার করা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগের ধুয়ো তুলে নিস্ক্রিয়তা আমাদের হতাশ করেছে।
তবে পুলিশ বলছে তারা ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল সহ এর আশেপাশে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেস্টা চালিয়ে গেলেও সাংবাদিক মিরনের পরিবারের পক্ষ্য থেকে থানায় এখনো কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী কঠোর আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মোতালেব শরীফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সাংবাদিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হামলা ও মারধরের স্বীকার হচ্ছে। এতে করে অশান্ত হয়ে উঠছে পর্যটনের পরিবেশ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটনের উপর ব্যাপক প্রভাব পরবে বলে মনে করেন হোটেল মোটেল সংগঠনের এই নেতা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ্য থেকে মিরনের উপর হামলাকারীদের বিচার দাবী সহ পর্যটনের৷ নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসেনর প্রতি আহবান জানান তারা।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সাংবাদিক দেশ ও মানুষের কল্যানে কাজ করে। আর সেই সাংবাদিকেরই নিরাপত্তা নেই। তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে এমন প্রশ্ন তার।
তিনি বলেন, সাংবাদিকের পাশাপাশি আমি একজন পর্যটন ব্যবসায়ী। পর্যটন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চাই পর্যটনে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা। এ ধরনের হামলার ঘটনায় পর্যটনের পরিবেশের উপর প্রভাব পরবে। তাই এঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে পারলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে তার ধারণা।
সাংবাদিকের উপর একের পর এক হামলা মামলা মুক্ত গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা। দেশে কোন কিছু হলে সেখানে সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়। আক্রান্ত হয় সাংবাদিক ও তার পরিবার।
গত ৫ আগস্টের পর কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন বিপ্লব ও মহিপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম এর বাড়িঘর লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়। এ ছাড়াও একাধিক সাংবাদিককে মামলায় জরানো হয়েছে। এজন্য যেমন দ্বায়ী রাস্ট্র ও সমাজ, তেমনি দ্বায়ী সাংবাদিকরাও। সাংবাদিকেরাও দলের লেজুড় ভিত্তিক হয়ে কাজ করছে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তারা দলের কাছে হেরে যায়। তৈরি হয় সাংবাদিকদের মাঝে পক্ষ বিপক্ষ। এর ফলে দেখা দেয় ঐক্যের অভাব। আর এর সুযোগ নেয় স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ। বর্তমানে মুক্ত গণমাধ্যমের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি মুক্ত সাংবাদিকতারও অভাব রয়েছে। আর এ সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকদের ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা।
কুয়াকাটার সাংবাদিক সমাজ এমন ঘটনার বিচার দাবী সহ দেশের সকল কলম সৈনিকদের ঐক্যের ডাক দিয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুয়াকাটা সহ দেশের সকল সাংবাদিক সমাজকে এখনি জেগে ওঠার সময় হয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। তবেই বন্ধ হবে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন এমনটাই বলছেন প্রগতিশীল সাংবাদিক সমাজ।