ঢাকা ০৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ঘন ঘন বৈরী আবহাওয়ায় হুমকিতে মৎস্য পেশা Logo ঋণ বাতিল করে জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে কলাপাড়ায় মানববন্ধন সাইকেল শোভাযাত্রা Logo ‎মির্জাগঞ্জে দাদীর সাথে অভিমানে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা Logo তিন বছর ধরে ঝুঁলে আছে আয়রণ ব্রিজ, ভোগান্তি চরমে  Logo মৎস্যজীবী দল নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিবের নিন্দা Logo বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে, উত্তাল সমুদ্রে মাতোয়ারা হাজারো পর্যটক Logo মির্জাগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় বাদী শ্রীঘরে Logo কুয়াকাটায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ, ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের আঘাতে জেলের মৃত্যু Logo মির্জাগঞ্জে ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Logo মহিপুরে পাওনা টাকার জেরে জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

 ছোটগল্প: ‘অন্যরকম ভালোবাসা’

বিডি কাগজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে

রবিন ও রত্না। একে অপরকে খুব ভালোবাসে। গতবছর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে তাদের পরিচয় হয়। পরে ফোনালাপ, মেসেঞ্জার চ্যাটিং, ফেসবুকিংয়ের মাধ্যমে মন বিনিময় হয় তাদের। ভালোবাসা গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। তবে সরাসরি দেখা খুব একটা হয়না। কারণ পড়াশোনা নিয়ে দু’জনই ব্যস্ত সময় পার করছে।

রবিনের বাড়ি কলাপাড়া পৌর শহরে। ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে। সে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। আর রত্নার বাড়ি আলীপুরে। কৃষক বাবার আদরের ছোট সন্তান ও একমাত্র মেয়ে। সে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।

রবিন অনেকবার রত্না’র সাথে দেখা করতে চেয়েছে, কাছাকাছি আসতে চেয়েছে, চেয়েছে পার্কে গিয়ে নির্জনে কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু রত্না তার কথায় কখনো সায় দেয়নি। সবসময় রবিনকে বুঝিয়েছে যে এগুলো ভালো নয়, বিয়ের পরেই এসব হবে। শুধু কাছাকাছি আসার নামই ভালোবাসা নয়। কিন্তু রবিনের তো তর সয়না। সে এ বছর ভালোবাসা দিবসের দু’দিন আগেও রত্নাকে ইলিশ পার্কে দেখা করতে বলে। কিন্তু রত্না কিছুতেই রাজি হলো না। তাই রবিন খুব রাগ আর অভিমান নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো ভালোবাসা দিবসের দিন ঘুমিয়ে কাটাবে।

ভালোবাসা দিবসের দিন সকাল সকাল রত্না কয়েকবার ফোন দিয়ে রবিনের ঘুম ভাঙায়। এত সকালে ফোন পেয়ে রবিন অবাক হয়ে যায় এবং কারণ জানতে চাইলে রত্না তাকে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাগরপাড়ে দেখা করতে বলে এবং স্পেশাল কিছু হবে বলেও জানায়। রবিন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। সে ভাবে আজ হয়তো রত্না তার কথায় রাজি হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু একটা হবে। মনের খুশিতে সে তার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে হোটেলে রুম বুকিং দিয়ে রাখে‌। যাতে অন্যদের মত নির্জনে কিছু সময় কাটাতে পারে। আসলে রত্না’র পরিকল্পনা ছিলো অন্যকিছু।

যা হোক রত্না নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সাগরপাড়ে চলে আসে এবং সাগরের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের মনটাকে সাগরের মত বিশাল করার কথা ভাবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন জানায়। এমন সময় রবিনের ডাকে তার ভাবনার বৈঠা ভেঙে যায়। রবিন খুব হন্তদন্ত অবস্থায় এসেই জিজ্ঞেস করলো রত্না’র পরিকল্পনা কি, সে আজ কোথায় যেতে চায়। রত্না কোথাও যাবেনা বরং আজ ওকে নিয়ে সাগরপাড়ে হেঁটে হেঁটে সময় কাটাবে বলে জানালো। কিন্তু রবিন তাকে নিয়ে হোটেলে গিয়ে নির্জনে সময় কাটাতে চাইলো। এতে রত্না তার উপর খুব রেগে যায়। পরে রবিন তার রাগ ভাঙিয়ে হাত ধরে হাঁটতে থাকে।

সাগরপাড়ের জিরোপয়েন্ট থেকে তারা ঝাউবনের দিকে হাঁটছে। তখন হঠাৎ একটা পথশিশু ময়লা পোশাকে কিছু অমসৃণ ফুল নিয়ে এসে বললো, ভাইয়া… একটা ফুল নেন না!

রবিন পথশিশুটার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো, এই এগুলো কি ফুল আনছিস? ময়লা। যা তোর ফুল নেবো না। আর এসব কি ছেঁড়াফাটা পোশাক পরেছিস……… যা দূরে যা যত্তসব।

পথশিশুটি কেমন অপরাধীর মতো নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। রত্না কি জানি বলবে- এমন সময় রত্নাকে উদ্দেশ্য করে রবিন বললো, চলো জান! তোমাকে চৌরাস্তার কোণার ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে দেবো।

ততক্ষণে পথশিশুটি অশ্রুসজল চোখে হেঁটে যেতে লাগলো। রত্না ঝামটা মেরে রবিনের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পথশিশুটির দিকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখের জল মুছে দিলো। আর রবিন পথশিশুটিকে স্পর্শ করতে বারণ করে রত্নাকে বললো, কি করছো এসব! ময়লা লাগবে তো।

রত্না রবিনের উপর খুব চটে গিয়ে চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলে এবং পথশিশুটিকে আদর করতে করতে রবিনকে বললো, মনে রাখবে ওরাও মানুষ। ওকে যে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করছেন আমাদেরকেও সেই সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শিখো। মানুষকে ভালোবাসার মাঝেই সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা নিহিত। আজ আমি তোমাকে নিয়ে ওদের মতো পথশিশুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছি, ওদেরকে নিয়ে দুপুরে একবেলা খাবার খেতে চেয়েছি। এটাই ছিলো আজকে আমার স্পেশাল পরিকল্পনা। যা হাঁটতে হাঁটতে তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কিনা… তুমি এমন তা আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে।

এতক্ষণে রবিন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে অনুধাবন করতে পেরেছে যে, সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সে যে শ্রেণির লোকই হোক। কারণ সবার সৃষ্টিকর্তাই তো মহান আল্লাহ।

রবিন অনুতপ্ত হয়ে পথশিশুটিকে কাছে টেনে রত্নার দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে বললো, সরি! আইঅ্যাম রিয়্যালি সরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও রত্না। সত্যিই আমরা বিত্তবানরা ওদের মতো মানুষদের মানুষ মনে করি না। আজ তুমি আমার চোখ খুলে দিলে। আজকের দিনটা সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আজকের দিনটা সত্যিই স্পেশাল। পরে রবিন ও রত্না দু’জন মিলে কিছু পথশিশুদের সাথে নিয়ে একত্রে দুপুরের খাবার খেলো এবং বিকেলে নিজ নিজ বাসস্থানে চলে গেলো।

লেখক: মাইনুদ্দিন আল আতিক

নিউজটি শেয়ার করুন

 ছোটগল্প: ‘অন্যরকম ভালোবাসা’

আপডেট সময় : ০৯:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

রবিন ও রত্না। একে অপরকে খুব ভালোবাসে। গতবছর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে তাদের পরিচয় হয়। পরে ফোনালাপ, মেসেঞ্জার চ্যাটিং, ফেসবুকিংয়ের মাধ্যমে মন বিনিময় হয় তাদের। ভালোবাসা গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। তবে সরাসরি দেখা খুব একটা হয়না। কারণ পড়াশোনা নিয়ে দু’জনই ব্যস্ত সময় পার করছে।

রবিনের বাড়ি কলাপাড়া পৌর শহরে। ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে। সে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। আর রত্নার বাড়ি আলীপুরে। কৃষক বাবার আদরের ছোট সন্তান ও একমাত্র মেয়ে। সে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।

রবিন অনেকবার রত্না’র সাথে দেখা করতে চেয়েছে, কাছাকাছি আসতে চেয়েছে, চেয়েছে পার্কে গিয়ে নির্জনে কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু রত্না তার কথায় কখনো সায় দেয়নি। সবসময় রবিনকে বুঝিয়েছে যে এগুলো ভালো নয়, বিয়ের পরেই এসব হবে। শুধু কাছাকাছি আসার নামই ভালোবাসা নয়। কিন্তু রবিনের তো তর সয়না। সে এ বছর ভালোবাসা দিবসের দু’দিন আগেও রত্নাকে ইলিশ পার্কে দেখা করতে বলে। কিন্তু রত্না কিছুতেই রাজি হলো না। তাই রবিন খুব রাগ আর অভিমান নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো ভালোবাসা দিবসের দিন ঘুমিয়ে কাটাবে।

ভালোবাসা দিবসের দিন সকাল সকাল রত্না কয়েকবার ফোন দিয়ে রবিনের ঘুম ভাঙায়। এত সকালে ফোন পেয়ে রবিন অবাক হয়ে যায় এবং কারণ জানতে চাইলে রত্না তাকে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাগরপাড়ে দেখা করতে বলে এবং স্পেশাল কিছু হবে বলেও জানায়। রবিন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। সে ভাবে আজ হয়তো রত্না তার কথায় রাজি হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু একটা হবে। মনের খুশিতে সে তার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে হোটেলে রুম বুকিং দিয়ে রাখে‌। যাতে অন্যদের মত নির্জনে কিছু সময় কাটাতে পারে। আসলে রত্না’র পরিকল্পনা ছিলো অন্যকিছু।

যা হোক রত্না নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সাগরপাড়ে চলে আসে এবং সাগরের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের মনটাকে সাগরের মত বিশাল করার কথা ভাবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন জানায়। এমন সময় রবিনের ডাকে তার ভাবনার বৈঠা ভেঙে যায়। রবিন খুব হন্তদন্ত অবস্থায় এসেই জিজ্ঞেস করলো রত্না’র পরিকল্পনা কি, সে আজ কোথায় যেতে চায়। রত্না কোথাও যাবেনা বরং আজ ওকে নিয়ে সাগরপাড়ে হেঁটে হেঁটে সময় কাটাবে বলে জানালো। কিন্তু রবিন তাকে নিয়ে হোটেলে গিয়ে নির্জনে সময় কাটাতে চাইলো। এতে রত্না তার উপর খুব রেগে যায়। পরে রবিন তার রাগ ভাঙিয়ে হাত ধরে হাঁটতে থাকে।

সাগরপাড়ের জিরোপয়েন্ট থেকে তারা ঝাউবনের দিকে হাঁটছে। তখন হঠাৎ একটা পথশিশু ময়লা পোশাকে কিছু অমসৃণ ফুল নিয়ে এসে বললো, ভাইয়া… একটা ফুল নেন না!

রবিন পথশিশুটার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো, এই এগুলো কি ফুল আনছিস? ময়লা। যা তোর ফুল নেবো না। আর এসব কি ছেঁড়াফাটা পোশাক পরেছিস……… যা দূরে যা যত্তসব।

পথশিশুটি কেমন অপরাধীর মতো নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। রত্না কি জানি বলবে- এমন সময় রত্নাকে উদ্দেশ্য করে রবিন বললো, চলো জান! তোমাকে চৌরাস্তার কোণার ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে দেবো।

ততক্ষণে পথশিশুটি অশ্রুসজল চোখে হেঁটে যেতে লাগলো। রত্না ঝামটা মেরে রবিনের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পথশিশুটির দিকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখের জল মুছে দিলো। আর রবিন পথশিশুটিকে স্পর্শ করতে বারণ করে রত্নাকে বললো, কি করছো এসব! ময়লা লাগবে তো।

রত্না রবিনের উপর খুব চটে গিয়ে চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলে এবং পথশিশুটিকে আদর করতে করতে রবিনকে বললো, মনে রাখবে ওরাও মানুষ। ওকে যে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করছেন আমাদেরকেও সেই সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শিখো। মানুষকে ভালোবাসার মাঝেই সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা নিহিত। আজ আমি তোমাকে নিয়ে ওদের মতো পথশিশুদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছি, ওদেরকে নিয়ে দুপুরে একবেলা খাবার খেতে চেয়েছি। এটাই ছিলো আজকে আমার স্পেশাল পরিকল্পনা। যা হাঁটতে হাঁটতে তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কিনা… তুমি এমন তা আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে।

এতক্ষণে রবিন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে অনুধাবন করতে পেরেছে যে, সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সে যে শ্রেণির লোকই হোক। কারণ সবার সৃষ্টিকর্তাই তো মহান আল্লাহ।

রবিন অনুতপ্ত হয়ে পথশিশুটিকে কাছে টেনে রত্নার দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে বললো, সরি! আইঅ্যাম রিয়্যালি সরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও রত্না। সত্যিই আমরা বিত্তবানরা ওদের মতো মানুষদের মানুষ মনে করি না। আজ তুমি আমার চোখ খুলে দিলে। আজকের দিনটা সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আজকের দিনটা সত্যিই স্পেশাল। পরে রবিন ও রত্না দু’জন মিলে কিছু পথশিশুদের সাথে নিয়ে একত্রে দুপুরের খাবার খেলো এবং বিকেলে নিজ নিজ বাসস্থানে চলে গেলো।

লেখক: মাইনুদ্দিন আল আতিক